অনেক অনেক কাল আগের কথা। সেই কালে বাজারে মানুষ কিনিতে পাওয়া যাইতো। মানুষ মানুষকে টাকা দিয়া কিনিয়া নিতে পারিতো। হাট বাজার হইতে আজ কাল আমরা যেই রূপ গরু ছাগল কিনিয়া নিয়া গলায় দড়ি লাগাইয়া গৃহের আঙিনায় বাঁধিয়া রাখি, ঠিক সেই রপ মানুষ কিনিয়া পোষ মানাইবার জন্য গৃহের আঙিনায় কিছু কাল শিকল দিয়া বাঁধিয়া রাখা হইতো। হাট বাজার হইতে দর দাম করিয়া কিনিয়া নেয়া মানুষটি বেশ কয়েক দিন খাওয়া দাওয়া নিয়া নখরা করিতো। তখন তাহাকে বাঁচাইয়া রাখিবার জন্য চাবুক কিংবা বেত দিয়া পিটাইয়া খাদ্য দ্রব্য গলদকরন করা হইতো। কারণ, টাকা দিয়া কিনিয়া আনা এই মানুষটি অনাহারে অভিমানে মরিয়া গেলে টাকাটাই জলে যাইবে। মানুষকে দিয়া পশুর মতো ভারী কাজ কর্ম করাইয়া বেশ সুবিধা পাওয়া যাইতো। পশু মানুষের কথা বুঝিতে পারিতো না কিন্তু মানুষকে সহজেই বুঝানো যাইতো। তখনকার দিনে শুধু মাত্র অর্থ ভিত্তশালিদের মানুষ কিনিবার সামর্থ্য ছিলো। তখন শরীরের খাঁচার ভিতরে মন নামে তরল কিংবা বায়বীয় একটা জিনিষ আছে তাহার অস্তিত্বের সন্ধান কেহ করিতো বলিয়া মনে হয় না। দিন পালটাইয়াছে। কালে কালে মানুষ সভ্য হইয়াছে। দেহের চাইতে মনের মূল্য অনেক বেশী তাহা মানুষ মনে প্রাণে অনুধাবন করিতে সক্ষম হইয়াছে। দেহ অর্জন করিতে হইলে তাহার আগে মন কব্জা করিতে হইবে, মানব জাতি এই অতিসূক্ষ্ম মার প্যাচে দক্ষতা অর্জন করিয়াছে। প্রেমিক প্রেমিকারা তাহাদের মনের বেচা কেনায় কিছু কাল পূর্বেও চিঠিতে মনের আকুতি প্রকাশ করিয়া কবুতর কিংবা অন্য কোন বাহনে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির নিকট পৌঁছাইয়া দিতো। এখন তথ্য প্রযুক্তি সেই সব ঝামেলার অবসান ঘটাইয়াছে। এখন ফেইসবুক নামক ডিজিটাল কবুতরের মাধ্যমে একেকজন প্রেমিক প্রেমিকা গোটা বিশেক প্রেমিকা কিংবা প্রেমিকের সাথে মনের বার্তা আদান প্রদান করিতে পারে। তাহাদের স্নায়ুতন্ত্র একই সাথে বহুজন কাঙ্ক্ষিত মানুষের সাথে মন বেচা কেনার কারবার চালাইয়া যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করিয়াছে। এই সভ্য ডিজিটাল প্রজন্ম দেহ ক্রয় করিবার ক্ষেত্রে নামে মাত্র পুঁজি (তিন টাকায় আড়াই মেঘাবাইট) বিনিয়োগ করিয়াও কারবার স্বাচ্ছন্দে চালাইয়া যাইতে পারে। বেচাকেনার কারবার যে শুধু মাত্র অনলাইনে প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ তাহা নহে। বরং ইহা অফলাইনে আমাদের ব্যাক্তিগিত পারিবারিক সামাজিক এমন কি রাজনৈতিক জীবনেও প্রসার লাভ করিয়াছে। এনালগ যুগে বেচাকেনায় অর্থ নামের হার্ডওয়্যার একমাত্র মাধ্যম ছিল। কিন্তু ডিজিটাল যুগে চাটুকারী, তৈল মর্দন, ম্যানেজিং ইত্যাদি সফটওয়্যার বিনিময় মাধ্যম হিসাবে বেশ সমৃদ্ধি লাভ করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে ধনী কিংবা গরীব যে কেহ ক্রেতা হইবার স্বামর্থ রাখেন। এই বাজারে স্বেচ্ছায় নিজেকে বিক্রয় করিবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় এবং ফাঁদে পরিয়া কেহ কেহ নিজেকে সস্তায় বিক্রয় করিতে বাধ্য হইয়া থাকেন। ইহাও লক্ষ্য করা যায় যে, একজন বিক্রেতা নিজেকে একই সাথে একাধিক ক্রেতার নিকট বিক্রয় করিবার ক্ষমতা রাখেন। এই খানে দুই একখানা যুতসই উদাহরণ না টানিলে নিজের মনের মধ্যে খুচ খুচানী থাকিয়া যাইবে বলিয়া আমার সন্ধেহ রহিয়া যাইতেছে। এই সন্ধেহ দূর করিবার জন্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনিসুলের পরিবারের একটি ঘটনা বলা যাইতে পারে। ডাক্তারের সুন্দরী স্ত্রী নিশিত তাহার একমাত্র স্বামীর বন্ধু আসিমুলের সাথে সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝে কে এফ সিতে যাইয়া থাকেন। মাঝে মাঝে বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকিলে ঘরের এসি যখন বন্ধ থাকে তখন আসিমুলকে নিয়া পার্কের বেঞ্চে বসিয়া বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহন করিতে যাইয়া থাকেন। একদিন নিশিত পার্কের বেঞ্চে বসিয়া আসিমুলের কাঁধে মাথা রাখিয়া গুন গুন করিয়া গান গাইতেছিলেন। এই রূপ অবস্থায় ডাক্তার আনিসুলের যুবক সহকারী পরিমল দেখিতে পাইয়া জিবে কামড় দিয়া হাতের চারখানা আঙ্গুল চোখের সামনে নিয়া চোখ ঢাকিয়া ফেলে। আরেক বার নিশ্চিত হইবার জন্য চোখের সামনে হইতে দুইটি আঙ্গুল উপরের দিকে তুলিয়া আর দুইটি আঙ্গুল নীচের দিকে নামাইয়া আনে। পরিমল নিশ্চিত হয় যে, সে যাহা দেখিতেছে তাহা সঠিক দেখিতে পাইতেছে -হ্যা, তিনি নিশিত ম্যাডাম। সাথে সাথে ইহাও নিশ্চিত হয় যে, নিশিত ম্যাডাম তাহাকেও দেখিতে ও চিনিতে পাইয়াছে। পরিমল সংসদ ভবনের সামনে দিয়া হাঁটিতেছে আর ভাবিতেছে -এই আপদজনক দৃশ্য কি চোখে না পরিলেই হইতো না। এই প্রণয় দৃশ্য দেখিবার অপরাধে আবার বিনা দোষে তাহার চাকুরীখানা ঝুকির মধ্যে পরিয়া যায় কি না। ফুটপাত ধরিয়া হাটিতে হাটিতে পরিমল টের পাইলো তাহার পিছনে একখানা প্রাইভেট কার হর্ন বাজাইতেছে। পিছন দিকে তাকাইয়া পরিমল চমকিয়া উঠিলো। গাড়ির চালকের আসনে নিশিত ম্যাডাম। চোখে কালো সানগ্লাস। মাথা নাড়াইয়া ইঙ্গিত করিতেছেন গাড়িতে উঠিবার জন্য। ভয় আর উত্তেজনায় হাঁটু কিঞ্চিত কাঁপিতেছে বলিয়া পরিমল অনুভব করিলো। পিছনের সিটে কে বসিয়া আছেন গাড়ির কালো গ্লাসের জন্য তাহা বুঝিতে পারা যাইতেছে না। সে নিশ্চিত পিছনে সন্ত্রাসী আসিমুল বস্তা আর ইট লইয়া বসিয়া আছে। তাহাকে খুন করিয়া বস্তায় ভরিয়া তাহার সাথে ইট বাঁধিয়া শীতলক্ষ্যা কিংবা বুড়িগঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ করা হইবে। পরিমলের মনে হইলো মোবাইল ফোনে মাকে জানানো দরকার যে, সে গুম হইতে যাইতেছে। কিন্তু সেই সময়টুকু পাওয়া যাইবে বলিয়া মনে হইতেছে না। এতক্ষণে গাড়ির দরজা খুলিয়া দেওয়া হইয়াছে। গাড়িতে ঢুকিতেই হইবে। পরিমল অর্ধেক উড়িয়া যাওয়া প্রাণের অবশিষ্ট হাতে লইয়া গাড়িতে উঠিয়া বসিলো। অবাক কাণ্ড, পিছনে কেহ নাই! নিশিত ম্যাডাম একা। ঘাতক অন্য কোথাও অবস্থান করিয়া ছুরি চাকু শান দিতেছে নিশ্চই। সেই খানে তাহাকে লইয়া যাওয়া হইতেছে। গাড়ি ঘুরাইয়া ধানমণ্ডির দিকে যাইতেছে। সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিতেছে। জীবনের সাতাইশ খানা বছর কাটিয়া গেলো। এখনো একখানা প্রেম কপালে জুটিলো না। তাহা হইলে মরিয়া যাইবার পর মা ছাড়াও অন্তত আরেক জন মানুষ তাহার জন্য কয়েক ফোটা জল ফেলিবার মতো থাকিতো। গুম হইবার পর মরিবার আগে তাহা হইলে মানুষের মনে এই রূপ অনুভূতি হইয়া থাকে! কোন কিছু বুঝিয়া উঠিবার আগেই গাড়ি ধানমণ্ডি লেকের পাশে গিয়া থামানো হইলো। নিশিত ম্যাডাম গাড়ি হইতে নামিয়া পিছনের দরজা খুলিয়া পরিমলের পাশে গিয়া বসিলেন। পরিমলের কাঁধে হাত রাখিয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিলেন। ভয়ে আশংকায় পরিমলের পা হইতে মাথা পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হইতে শুরু করিলো। এই আবার কোন বিপদের সূত্রপাত! কোমল কণ্ঠে পরিমলকে জিজ্ঞাসা করিলো -পরিমল, তুমি কি জীবনে কখনো প্রেমে পরিয়াছো? -জি... জি... জি না ম্যাডাম। কাঁপিতে কাঁপিতে পরিমল উত্তর দিলো। -তুমি কি জানো, তুমি ভুল করিতেছ? -জি... না... ম্যাডাম। -ইহার মানে তুমি ভুল করিতেছ। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। বিফলে সময় বিনষ্ট করিলে, তো ঠকিয়া গেলে। এই যে আমি তোমার গালে ধরিয়া একটু খানি আদর করিয়া দিলাম, ইহাতে তুমি কি আনন্দ পাইতেছ না? পরিমলের মুখখানা এতক্ষণে কিঞ্চিত লাল বর্ণ ধারণ করিলো। জীবনের প্রথম নিজের গালে তুলতুলে নরম হাতের পরশ পাইয়া আহ্লাদে বিগলিত হইয়া গেলো। পরিমল ইহাও নিশ্চিত হইতে পারিলো যে এই যাত্রা তাহার প্রাণ যাওয়ার আশংকা নাই। সে লাজুক হাসিয়া যাহা বুঝাইবার বুঝাইয়া দিলো। এতক্ষণে পরিমলের নাকে কার পারফিউম আর ম্যাডামের বডি পারফিউম মিলাইয়া ককটেল সুবাস আসিয়া ধাক্কা মারিলো। -তুমি এখন কোথায় যাইবে? -স্যারের চেম্বারে। -ঠিক আছে তুমি পিছনেই বসিয়া থাকো, আমি তোমাকে কাছাকাছি কোথাও নামাইয়া দিবো। -জি ম্যাডাম। তিনি আবার নামিয়া গিয়া চালকের আসনে বসিলেন। গাড়ি চালাইতে চলাইতে তিনি কথা চালাইতে থাকিলেন। -পরিমল। -জি ম্যাডাম। -তোমাকে অতি জরুরী একটা কাজ দিবো করিয়া দিতে পারিবে? -অবশ্যই পারিবো ম্যাডাম। বলুন কি কাজ করিতে হইবে? -তোমার স্যারের দিকে একটু বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিবে। সুন্দরী মহিলা রোগিণীদের সহিত তাহার আচরণ আমাকে জানাইবে। -জি আচ্ছা ম্যাডাম। নিশিত ম্যাডাম পরিমলকে বাংলা মোটর মোড়ে নামাইয়া দিয়া বাসার দিকে চলিয়া গেলেন। পরিমল বার বার নিজের গালে হাত বুলাইয়া মনের পুলকিত ভাব খানা আরেক বার ফিরাইয়া আনিবার চেষ্টা করিলো। নিজের গাল হাতাইতে হাতাইতে ফুটপাত ধরিয়া হাঁটিয়া চেম্বারের দিকে আগাইতে থাকিলো। ডাক্তার আনিসুলের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বেশ নাম ডাক হইয়াছে। সেই সূত্রে ভালো রোগী টুগি পাইতেছেন আজকাল। হৃদয়ের জটিল রোগে আক্রান্ত বেশ কিছু সুন্দরী মহিলা রোগিণীর যাতায়াত আছে তাহার চেম্বারে। একেক জন সুন্দরী মহিলার পিছনে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দেন। ম্যাডামের নির্দেশ শুনিবার পর হইতে পরিমলের চোখে একটা দৃশ্য বার বার ভাসিতে থাকিলো -স্যার তাহাদের বুকের কাছে স্টেথিস্কপ্ ধরিয়া অনেকক্ষণ নাড়া চাড়া করিয়া থাকেন। যতক্ষণ না করিলেও চলে। আজ রোগী দেখিবার শিডিউল নাই। আজ শুধু অফিসের কিছু লেখালেখির কাজ করিতে হইবে। ইহার ফাঁকেও দুই একজন জটিল রোগী যে চলিয়া আসেন না তাহা নহে। স্যারের চেম্বারে ঢুকিয়া পরিমল একজন সুন্দরী মহিলার উপস্থিতি দেখিতে পাইলো। গলায় স্টেথিস্কপ্ ঝুলাইয়া চেয়ার হইতে উঠিয়া দরজার কাছে চলিয়া আসিলো ডাক্তার আনিসুল। পরিমলের কাঁধে হাত রাখিয়া বলিলো -পরিমল, তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের কি যেন নাম? -স্যার আমার কোন গার্ল ফ্রেন্ড নাই। -পরিমল, আমি কি তাহা হইলে মিথ্যা কথা বলিতেছি? -জি না স্যার। আপনি যদি বলেন সূর্য আজ পূর্ব দিকে অস্ত গিয়াছে, তাহাই সঠিক স্যার। -গুড, নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ মুক্তি পাইয়াছে শুনিয়াছো? -জি স্যার। -আজ কোন কাজ করিতে হইবে না। আজ তুমি তোমার গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়া নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ দেখিয়া আসো। -জি আচ্ছা স্যার। এক দিন পর দেশের সব পত্রিকায় একটা ভয়াবহ খুনের খবর ছাপা হইলো -সন্ত্রাসী আসিমুলের গুম হওয়া তিন সহযোগীর বস্তাবন্দী লাশ শীতলক্ষ্যায় উদ্ধার। নিহতের পরিবার ও পুলিশের ধারণা আসিমুল এই খুনের সাথে সরাসরি জড়িত। সাংসদ সুলেমানের ডান হাত আসিমুল। সাংসদের সাথে কিছু একটা নিয়া ফ্যাঁকড়া লাগাইবার চেষ্টা করিতেছিলো এই তিন চেলা। পুলিশ আসিমুলকে ধরিবার চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু খুঁজিয়া পাইতেছে না। সাংসদ সুলেমান তাহার নিষ্পাপ নিবেদিত কর্মীর নামে এমন মিথ্যে খবর ছাপা হওয়ায় বড়ই বিব্রত বোধ করিতেছেন। এমন পাপ কর্মের সাথে তাহার পুত্রতুল্য আসিমুল কিছুতেই জড়িত থাকিতে পারে না। এই মর্মে দলের নেতা কর্মীদের অবগত করিবার উদ্যেশ্যে সন্ধ্যার পর তাহার অফিসে ডাকিয়াছেন। সাথে ডাকিয়াছেন পক্ষে বিপক্ষে প্রতিবেদন করা মিডিয়ার সাংবাদিকদেরকে। প্রবল আগ্রহ লইয়া সবাই যথা সময়ের বেশ খানিকটা আগেই উপস্থিত হইয়াছেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল লাইভ টেলিকাস্টের ব্যবস্থা করিয়াছে। সাংসদ সুলেমান তাহার বক্তব্য দিয়া শুরু করিলেন -উপস্থিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আমার (৩০ সেকেন্ড বিরতি) উপস্থিত আমার সংগ্রামী সহকর্মী বৃন্দ... আজ দেশ যখন বিদ্যুৎ গতিতে সামনের দিকে আগাইয়া যাইতেছে... আমরা যখন মাহাথির মোহাম্মদের মতো বুশ... সরি, বারাক ওবামার গালে মুতিয়া দিবার কথা উচ্চারণ করিবার সক্ষমতা অর্জন করিয়া ফেলিয়াছি... তখন... বিরোধী অপশক্তি... খুন গুমের মতো অপকর্ম করিয়া... আমাদের নামে চালাইয়া দিবার অপচেষ্টা করিতেছে। ভায়েরা আমার... খুন হওয়া এই তিন তিনটি নিষ্পাপ আত্মার কসম, এরা আমার কোলে পিঠে করিয়া মানুষ করা সন্তানের মতোই ছিলো। এদের খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমি নির্দেশ দিতেছি। আমি এখন এই ব্যপারে আমার স্নেহধন্য...সংগ্রামী...দলের জন্য নিবেদিত...বিরোধী দলের নির্যাতনে জর্জরিত নেতা আসিমুলকে তাহার আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদানের আহবান জানাইতেছি। সব গুলি ক্যামেরা আসিমুলের দিকে তাক করা হইলো। সে মিনিট খানেক সময় নীরব থাকিয়া চেহারায় ভাবগাম্ভীর্য আনিবার চেষ্টা করিলো। ভারী কণ্ঠে শুরু করিলো -উপস্থিত... আমার শ্রদ্ধাভাজন... প্রাণপ্রিয়... দেশের গর্ব... এলাকাবাসীর আত্মা... আমাদের রাজনৈতিক গুরু জনাব সুলেমান এবং উপস্থিত আমার সহকর্মীবৃন্দ উপস্থিত সাংদাদিক ভাই ও বোনেরা... স্লামালাইকুম। আজ মনের মধ্যে অনেক জ্বালা যন্ত্রণা লইয়া আপনাদের সামনে উপস্থিত হইয়াছি। সাংবাদিক ভাই বোনদের উদ্যেশ্য করিয়া বলিতে চাই। আপনারা... আমার বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যা যাহা কিছুই লিখিয়াছেন তাহাতে আমার দুঃখ নাই। কিন্তু... পরোক্ষ ভাবে কোন কোন পত্রিকা খুনের সাথে আমার গুরুকে জড়াইয়া কিছু কিছু খবর ছাপাইয়াছেন... এটা অন্যায়... আমার গুরু জনাব সুলেমান... তাহার সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছুই অবগত নন। তিনি টেলিভিশনের চোখ ফাঁকি দিয়া মানুষের উপকার করিয়া থাকেন। তিনি নিজে মাথায় কম্বল মুড়াইয়া শীতের রাত্রিতে কমলাপুর রেল ষ্টেশনে গরীব মানুষের গায়ে কম্বল জড়াইয়া দেন। তিনি... রাতের আঁধারে ক্ষুধার্ত মানুষের ঘরে ঘরে চাল ডাল আলু লবন তৈল পৌঁছাইয়া দেন। তিনি এখন আর সাধারণ মানুষের পর্যায়ে নাই... তিনি পীর আউলিয়ার পর্যায়ে চলিয়া গিয়াছেন। আর আপনারা কিনা এই ফেরেস্তাতুল্য মানুষটাকে নিয়া যাতা লিখিতেছেন...!!! আসিমুলের কণ্ঠ জড়াইয়া আসিতেছে। চোখ জলে ছল ছল করিতেছে। সাংসদ সুলেমান টিস্যু বক্স হইতে একখানা পেপার লইয়া চোখ মুছিতেছেন। সাংদাদিক ভাই বোনেরা দুই ভাগে বিভক্ত হইয়া মনের ভাব প্রকাশের চেষ্টা করিতেছেন। কেহ কেহ কাঁদিবার ভান করিয়া পকেট হইতে টিস্যু কিংবা রুমাল বাহির করিয়াছেন। কেহ কেহ এক চিলতে মুচকি হাসি ঠেকাইবার চেষ্টা করিতেছেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক
Osadharon kore likhechen..amon likhoni pathoker Mon joy korbei.,apnake onek onek dhonnobad vaiya
লতিফ ভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের রাজনীতির এই চেহারা আমরা মন থেকে মুছে ফেলতে চাইলেও সম্ভব না। ঘুরে ফিরে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এসে যুক্ত হবেই... ভালো থাকুন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।